একুশে পদকপ্রাপ্ত নির্ভীক সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যার পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের ১৮তম বার্ষিকী : সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ শীর্ষক আলোচনাসভায় তাঁরা বলেন, এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় এবং হত্যার পরিকল্পনাকারী, পৃষ্ঠপোষক, অর্থদাতাসহ খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় স্বাধীন সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়েছে।

মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের ১৮তম বার্ষিকীতে আয়োজিত স্মৃতিচারণা সভায় সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক আশীষ কুমার দে। সাংবাদিক মানিক সাহার সুহৃদদের পক্ষ থেকে আয়োজিত আলোচনাসভায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, নিউজটোয়েন্টিফোরের নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, বিএফইউজের মহাসচিব দীপ আজাদ ও কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জি এম মাহবুব আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, ডিইউজে নির্বাহী কমিটির সদস্য সাকিলা পারভীন, সাংস্কৃতিক সংগঠক রাহুল রাহা, উন্নয়নকর্মী আমিনুর রসুল বাবুল, সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম সবুজ, মানিক লাল ঘোষ ও নিখিল ভদ্র। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাংবাদিক পলাশ আহসান।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সাংবাদিক হত্যায় বিচার না হওয়া দেশের তালিকায় বাংলাদেশ দশম। ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত খুন হওয়া সাংবাদিকের সংখ্যা ৩৫ জন। এর মধ্যে মানিক সাহা হত্যা মামলাসহ কয়েকটি মামলায় বিচার বলতে কিছু একটা হলেও বিচারের রায় নিয়ে সংশ্লিষ্টরা উষ্মা প্রকাশ করেছে। মানিক সাহা হত্যা মামলার রায়ের পর সারা দেশের সাংবাদিকরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেছেন। পুনঃ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু তা কেউ আমলে নেয়নি। সাংবাদিক হত্যার অন্য মামলাগুলোর কোনোটির বিচার শুরু হয়নি। কোনোটার চার্জশিট দেওয়া হয়নি। আবার কোনোটি নথিপত্রের অভাবে হারিয়ে গেছে। বেশির ভাগ মামলায় নথিপত্রের অভাবে অভিযুক্তরা দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে।

সাংবাদিক নেতা ওমর ফারুক বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলেও সেটাকে বাদ দিয়ে অন্য তিনটি স্তম্ভের ওপর রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার অপচেষ্টা চলছে। তিন পায়ে দাঁড় করিয়ে রাষ্ট্রকে ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অপব্যবহার করে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এরপর গণমাধ্যম কর্মী আইন নামে সাংবাদিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণের আরেকটি কালো আইন পাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সকল কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে মানিক সাহার মতো সাহস ও দূঢ়তা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় মানিক সাহার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে নানা স্মৃতি তুলে ধরে বক্তারা বলেন, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় দৃষ্টান্ত রেখেছেন মানিক সাহা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাই তার হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় মানিক সাহা নিহত হন। সভার শুরুতে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর আগে মানিক সাহার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।